শুক্রবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১২

কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে এলিট ফোর্স

কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে এলিট ফোর্স


চলতে ফিরতে দেখা

॥ ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী ॥

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন গঠনের পর সারা দেশে সাড়া পড়ে গিয়েছিল। এই বাহিনী তখন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এমন সব অভিযান পরিচালনা করেছিল যে, সর্বত্রই এরা সম্মানের আসন লাভ করেছিল। তাদের কর্মকাণ্ডে জনজীবনে অনেকখানি স্বস্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং সত্যি সত্যি অপরাধীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্কও সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা সাধারণ মানুষ র‌্যাব নিয়ে গর্ব করতে শুরু করেছিলাম। তখন তাদের জবাবদিহিতা ছিল। এমনকি আমি সেলুনে গিয়ে পাঁচ-ছয় বছরের শিশুকে বলতে শুনেছিলাম যে, আমাকে র‌্যাবের মতো চুল ছেঁটে দিন। ক্ষৌরকার বালকটিকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন যে, র‌্যাবের তো চুল দেখা যায় না। সেটা কালো কাপড়ে ঢাকা থাকে। কিন্তু বালক জেদ ধরছিল তার চুলের ছাঁট র‌্যাবের মতোই হওয়া চাই। সেটা চারদলীয় জোট সরকারের আমল। আমাকে কেউ কেউ তাদের সমর্থক বলে মনে করে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাকে যদি কিছু জ্ঞানবুদ্ধি দিয়ে থাকেন, তাহলে এখনো আমি দৃঢ়তার সাথে বলব যে, বর্তমান দুঃশাসনের তুলনায় জোট সরকারের শাসনকাল বাংলাদেশের স্বর্ণযুগ। এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, কট্টর আওয়ামী লীগারেরাও এখন আর চিন্তা করছেন না, আগামী দিনে সুষ্ঠু কোনো নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে।

এর মধ্যে অন্তহীন অপকর্ম ঘটেছে। বিএনপির শাসনকালকে ‘দুর্নীতি’ ‘দুর্নীতি’ বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার মন্ত্রী, নেতা, পাতিনেতারা অবিরাম মুখে ফেনা তুলে যাচ্ছেন। প্রমাণ কিছুই করা যায়নি। এই সরকার ও তাদের আঁচল বিছিয়ে ডেকে আনা এক-এগারোর সরকারের আমলে। এই পাঁচ বছর সরকার অবিরাম জিগির করেই যাচ্ছেÑ বিএনপি দুর্নীতিবাজ, মহাদুর্নীতিবাজ। আওয়ামী লীগের ‘আন্দোলনের ফসল’ এক-এগারোর সরকার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নানাবিধ দুর্নীতির মামলা দায়ের করেছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবলে তিনি তার নামে দায়ের করা মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। কিন্তু তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার সন্তান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের বিরুদ্ধে অবিরাম মামলা দায়ের করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার সরকার ও তার সহযোগীরা এবং ভারতীয় প্রভুরা তারেক রহমানকে দুর্নীতির প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করার কী প্রাণান্তকর প্রচেষ্টাই না করছেন! 

কিন্তু প্রমাণ তো কিছুই মিলছে না। প্রমাণ না মিললে কী যায়-আসে? সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতার ক্ষমতাবলে এমন আইন করবে যে, অভিযোগই প্রমাণ। তার নমুনা আমরা দেখতে পেলাম যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ট্রাইব্যুনাল সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে পুলিশের রিপোর্টকেই প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা সাধারণ নাগরিক সবাই আইনবিশারদ নই। কিন্তু পুলিশ বলল, স্বাধীনতা যুদ্ধকালে জনাব ‘ক’ অগ্নিসংযোগ করেছেন। সেটা কে দেখেছে, পুলিশ তাদের হাজির করতে পারল না। কিন্তু আদালত বললেন, অভিযোগই শিরোধার্য। তাই যদি হয় তাহলে পুলিশই তো যথেষ্ট। আদালত রাখার আর কোনো দরকার হয় না। 

পুলিশ কিংবা র‌্যাব ইতোমধ্যে অনেক কাণ্ড করেছে। পুলিশের কর্মকর্তারা ডাকাতি করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন। র‌্যাব বহু জায়গায় তাদের সম্মান হারিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে এখন ডাকাতির অভিযোগ, হত্যার অভিযোগ, ছিনতাইয়ের অভিযোগÑ এমন সব অভিযোগ ক্রমান্বয়ে পাহাড় হয়ে উঠেছে। এটা এমনি এমনি হয়নি। এই সরকারের সবচেয়ে সফল মন্ত্রী সাহারা খাতুন অবিরাম বলেই যাচ্ছেন, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন সর্বকালের সর্বোত্তম। পুলিশ-র‌্যাব যা কিছু করছে তার দায়দায়িত্ব যেন তিনি নিজেই গ্রহণ করেছেন। ফলে এই দুই বাহিনীর জবাবদিহিতা এখন শূন্যের কোঠায় পৌঁছে গেছে। তা ছাড়া বিরোধী দলকে নানাভাবে ঠেঙ্গানোর জন্য সরকার র‌্যাব-পুলিশকে ব্যবহার করেই যাচ্ছে। 

এতে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রশ্রয়ের ফলে পুলিশ-র‌্যাব এখন নানাভাবে অভিযুক্ত হচ্ছে। এরা কী যেন চায়! একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে গণভবনের কোনায় বাস থেকে নেমে আওরঙ্গজেব রোড দিয়ে হেঁটে বাসায় ফিরছিলাম। সামনে র‌্যাব-পুলিশের চেকপোস্ট। তারা আমাকে থামালেন। বললেন, এত রাতে কোথা থেকে এসেছি। বললাম, অফিস থেকে। আমার অফিসের চাকরি রাত পর্যন্ত চলে। তারা আমার পরিচয় জানতে চাইলেন না। বললেন, সাইডে দাঁড়ান। আমি ঘটনা পর্যবেক্ষণের জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর একজন এসে বললেন, আপনার কোনো পরিচয়পত্র আছে? আমি বললাম, সকল নাগরিকের পরিচয়পত্র নিয়ে চলাফেরা বাধ্যতামূলক নয়। ভোট দেয়া, চাকরি চাওয়া, কিংবা ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য তা আংশিক বাধ্যতামূলক। সুতরাং আপনারা আমার পরিচয়পত্র দাবি করতে পারেন না। আমি বাংলাদেশের নাগরিক। কারফিউ জারি না হলে এ দেশের যেকোনো স্থানে যেকোনো সময় সরাসরি চলাফেরা করা আমার অধিকার। আপনারা শুধু আমাকে এই পরীক্ষা করতে পারেন যে, আমার সাথে আগ্নেয়াস্ত্র বা মাদক আছে কি না। তা ছাড়া সাংবিধানিকভাবে আপনাদের আমাকে দাঁড় করিয়ে রাখার কোনো এখতিয়ার নেই। তারা আমার পকেট হাতড়াতে শুরু করলেন। শেষে বললেন, মানিব্যাগে কী আছে? আমি বললাম, হাজার ছয়েক টাকা আছে। তারা বললেন, আপনার মানিব্যাগ দেখতে চাই। কোনো বিদেশী টাকা আছে কি না। এ পুরো সময় পর্যন্ত তারা কেউ-ই আমার নামও জিজ্ঞেস করলেন না কিংবা আমি কী কাজ করি সেটিও জানতে চাইলেন না। 

আমি বললাম, যদি আমার মানিব্যাগের টাকা আপনারা নিতে চান তাহলে আমি আগামীকাল আদালতে এই মর্মে মামলা করব যে, আওরঙ্গজেব রোডে রাত অতটা অত মিনিটে কর্তব্যরত পুলিশ-র‌্যাবেরা আমার টাকা ছিনতাই করেছে। সাংবাদিক হিসেবে নিজের পরিচয় দিলে হয়তো বহু আগেই এর মীমাংসা হয়ে যেত। কিন্তু শুধু সাধারণ মানুষ কী ভোগান্তিতে পড়ে সেটা বোঝার জন্য আমি যেচে সে পরিচয় দিইনি। কিন্তু সম্ভবত আমাকে সুবিধাজনক লোক মনে না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তারা বললেন, আচ্ছা, আঙ্কেল আপনি যান।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে পুলিশ-র‌্যাবকে যথেচ্ছ ব্যবহার করার ফলে তারা তাদের সাহসের মাত্রা অতিক্রম করেছে। যত দূর মনে পড়ে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা খুব সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের এখন প্রধান নায়ক। লিমনের পা হারানো থেকে শুরু করে হাজারো অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ অভিযোগ নরসিংদীতে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায়। র‌্যাব বলেছে, এরা একটি মাইক্রোবাসে করে এক ব্যবসায়ীর ৪০ হাজার টাকা ছিনতাই করেছে এবং র‌্যাবকে উদ্দেশ করে গুলিটুলি চালিয়েছে। সে রকম সময়ে ছয়জন যুবক র‌্যাবের গুলিতে খুন হয়েছেন। আওয়ামী প্রভাবান্বিত বলে পরিচিত বিডিনিউজ ২৪ ডট কম ৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার খবর দিয়েছে যে, এ ঘটনা কাল্পনিক। জানি না, রিপোর্টটি সব পত্রিকায় প্রকাশিত হবে কি না। তবে সাধারণের জ্ঞাতার্থে রিপোর্টটি তুলে দেয়া হলো। তা থেকেই বোঝা যাবে, এটা ক্রসফায়ার নাকি র‌্যাবের ভিন্ন কিছু। রিপোর্টটি নিম্নরূপ : 

‘‘বন্দুকযুদ্ধ নয়, অস্ত্র ঠেকিয়ে হত্যা : প্রত্যদর্শী আবু সুফিয়ান ও বেনজীর আহমেদ বেণু
ঢাকা, এপ্রিল ০৫ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম)। 
র‌্যাব বরাবরের মতো বন্দুকযুদ্ধের কথা বলে এলেও নরসিংদীতে গত সোমবার দুপুরে নিহতদের অন্তত একজনকে অস্ত্র ঠেকিয়ে হত্যা করা হয় বলে ঘটনার প্রত্যদর্শী এক ব্যক্তি দাবি করেছেন। 
যে স্থানটিতে ছয়জন নিহত হন, তার পাশেই একটি ফসলের মাঠ থেকে ঘটনাটি দেখেন বলে ওই ব্যক্তি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমকে জানিয়েছেন।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমালোচনার মুখে থাকা র‌্যাবের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ আরো রয়েছে, যদিও সন্ত্রাস দমনে গঠিত বিশেষ এই বাহিনী বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে। 
প্রত্যদর্শী ওই ব্যক্তি বলেছেন, অভিযানে অংশ নেয়া কয়েকজন র‌্যাব সদস্যকে আগেও ওই এলাকায় দেখেছিলেন তিনি, যেখানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনা আগেও ঘটেছিল। দুই দিন পর বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থলের পাশেই ধানেেত কাজ করতে দেখা যায় কয়েকজন কৃষককে, যাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিকে পাওয়া যায়, যিনি ঘটনাটি দেখেছেন বলে জানিয়েছেন। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমকে তিনি ঘটনার বর্ণনা দিলেও র‌্যাব মেরে ফেলতে পারে এই ভয়ে নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি স্থানীয় ওই ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘আমি েেত সেচ দিচ্ছিলাম। একটি গাড়ি এসে থামে, তার ভেতরে র‌্যাবের সদস্যরাও ছিল। ওই গাড়িতে কমপে ১০ জনকে দেখেছি আমি। হঠাৎ গুলির শব্দ হতে থাকে, ভয়ে আমি ধানেেত পাহারার জন্য স্থাপন করা অস্থায়ী মেশিন ঘরে ঢুকে যাই। সেখান থেকে রাস্তার ওপরই একজনকে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করতে দেখি।” 

স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানান, খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা গুলিবিদ্ধ ছয়জনের লাশ দেখতে পেয়েছেন। রাস্তার দুই পাশের খাদে পাওয়া যায় দুইজনের লাশ। পিচঢালা রাস্তার ওপর উপুড় হয়ে পড়ে ছিলেন একজন। মাইক্রোবাসে ছিল দুইজনের লাশ এবং ট্রাকে ছিল একজনের রক্তাক্ত দেহ। সড়কের ওপর পড়ে থাকা ব্যক্তিকে অস্ত্র ঠেকিয়ে হত্যার ঘটনা দেখার কথা জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি। যেখানে লাশটি পড়ে ছিল পিচঢালা সড়কের সে স্থানটিতে প্রায় তিন ইঞ্চি গভীর গর্ত দেখা গেছে। গর্তের চার দিকে দেখা গেছে বারুদের দাগ, দুই দিন পরও ছিল রক্তের দাগ। সে দিন সড়কে পাওয়া গিয়েছিল আরিফের (১৮) লাশ। এ বছরই এসএসসি পরীা দেয় শহরের ভেলানগর মহল্লার আবুল হাসিম মিয়ার ছেলে আরিফ। সে পরীায় অংশ নেয় কারারচর মৌলভী তোফাজ্জল হোসেন উচ্চবিদ্যালয় থেকে। র‌্যাব অস্ত্র ঠেকিয়ে হত্যার পর তা বন্দুকযুদ্ধ বলে চালিয়ে দিয়েছেÑ এমন ঘটনার প্রমাণ আগেও পাওয়া গিয়েছিল বলে জানান কয়েকজন মানবাধিকারকর্মী। ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর ঝিনাইদহের পায়রাডাঙ্গা গ্রামের মিছাখালি মাঠে (শুকনা পাটকাটা তে) মুকুল মণ্ডলকে (৩২) এভাবে হত্যা করা হয় বলে দাবি করেছেন একজন মানবাধিকারকর্মী। 

তিনি বলেছেন, পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য মুকুল বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন বলে র‌্যাব দাবি করলেও তার পিঠে তিনটি গুলির চিহ্ন ছিল। তিনটি গুলিই দেহ ভেদ করে মাটিতে গর্ত তৈরি করেছিল। নরসিংদীতে নিহত ছয়জনের স্বজনেরা ইতোমধ্যে দাবি করেছেন, সে দিন কোনো ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হয়নি, তা ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। নরসিংদীর ৫ নম্বর ব্রিজ এলাকার কৃষিশ্রমিকেরা জানান, সারা দিন ধানেেত শ্রমিকদের কাজকর্ম চললেও দুপুরের খাবারের সময় একদম নির্জন হয়ে যায় পুরো এলাকা। বুধবার ৪ এপ্রিল বেলা আড়াইটার সময় (প্রায় একই সময় ঘটেছিল সোমবারের কথিত বন্দুকযুদ্ধ) সরেজমিন দেখা যায়, দুই পাশের ধানেেত মাত্র কয়েকজন সেচ দিচ্ছেন। গাড়ি চলাচলও খুব কম। 

ওই এলাকায় এর আগেও র‌্যাবের ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটেছিল বলে স্থানীয়রা জানান। কয়েক বছর আগে শহরের দত্তপাড়ার নূর মোহাম্মদ নূরা (৩৫), কাউরিয়াপাড়ার আবু সিদ্দিক (৪২) ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান নির্জন এই সড়কের পূর্ব দিকে তৈরি করা হেলিপ্যাডের পাশে। ২ এপ্রিলের ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনার প্রত্যদর্শী ব্যক্তি বলেন, ঘটনার আগের কয়েক দিনের মধ্যে তিন থেকে চারজন র‌্যাব সদস্যকে ওই এলাকায় দেখেছেন তিনি, যারা ওই অভিযানে ছিলেন। 

‘এরা আগেও এই এলাকায় এসেছেন। ঘুরেফিরে চলে গেছেন’ বলেন তিনি। র‌্যাবের বক্তব্য অনুযায়ী, মারুফ হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীর ৪০ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের খবর পেয়ে তারা ওই অভিযানে নামেন, যাতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ছয়জন নিহত হন। 
নিহত ছয়জনকে র‌্যাব ‘কুখ্যাত’ ডাকাত বললেও তাদের মধ্যে মাত্র দু’জনের বিরুদ্ধে দু’টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। নিহত বাকি চারজনের পাশাপাশি আহত ও আটক মিলিয়ে আটজনের বিরুদ্ধে কোনো মামলার হদিস মেলেনি। 

র‌্যাবের বক্তব্য : গুলি ঠেকিয়ে হত্যার এই অভিযোগের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নরসিংদীর অভিযানে অংশ নেয়া র‌্যাব-১১-এর উপসহকারী পরিচালক মেজর খন্দকার গোলাম সারওয়ার সরাসরি এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। যার লাশ সড়কে পড়ে ছিল, তার গুলি কোথায় লেগেছিল এবং তা দেহ ভেদ করে বেরিয়েছিল কি নাÑ জানতে চাইলে তিনি ৫ এপ্রিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমকে বলেন, ‘তা আমি খেয়াল করিনি। দেখে বলতে হবে। পিঠে না পেটে গুলি লেগেছে, তা বলা মুশকিল। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আমি তো এক্সপার্ট না। সে দিন প্রচণ্ড দৌড়াদৌড়ির পরিস্থিতি ছিল। কেউ নিজে না দেখলে পরিস্থিতি অনুমান করা কঠিন।’ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এই কর্মকর্তার স্বারিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, র‌্যাব-১১-এর (সদর দফতর নারায়ণগঞ্জের আদমজীনগর) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু হেনা মো: মোস্তফা খবর পান, নরসিংদী শহরে এক ব্যবসায়ীর ৪০ হাজার টাকা ডাকাতি করে শহর ও আশপাশে ঘোরাফেরা করছে একদল ডাকাত। ওই টাকা উদ্ধার ও ডাকাতদের গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে র‌্যাব-১১-এর অধিনায়কের নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি দল কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে নরসিংদী শহর ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালায় বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। এতে বলা হয়, ‘‘ডাকাত দল আরো একটি ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে নরসিংদী-মদনগঞ্জ সড়কের ৫ নম্বর ব্রিজের কাছে প্রস্তুতি নেয়ার সময় র‌্যাবের একটি দল সেখানে পৌঁছলে ডাকাতেরা র‌্যাবের মাইক্রোবাসের সামনে একটি ট্রাক থামিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয় এবং পেছনের একটি মাইক্রোবাস থেকে র‌্যাবকে ল্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। ‘সরকারি জানমাল রা ও আত্মরার্থে র‌্যাব সদস্যরা পাল্টা গুলি চালালে’ ছয় ছিনতাইকারী নিহত এবং অন্যরা আহত হয় বলে র‌্যাব জানায়। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ র‌্যাবের এসআই শহীদ ও সিপাহি সাইফুল ইসলাম আহত হন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি পিস্তল, একটি এলজি, একটি কার্তুজ, দু’টি চাকু, ১০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি এবং ছিনতাই হওয়া নগদ ৪০ হাজার টাকা উদ্ধারের দাবিও করে র‌্যাব।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম/এএসটি/প্রতিনিধি/ এমআই/১৮৩৫ ঘ.” এরপর সাধারণ মানুষ কিভাবে বিশ্বাস করব যে, পুলিশ কিংবা র‌্যাব ন্যায়সঙ্গত যৌক্তিক কাজ করছে। কেন তাদের জবাবদিহিতার কোনো ব্যবস্থাই করা যাবে না? লিমনের পা হারানোও, না। আমিনবাজারে ছয়ছাত্র হত্যা, না। নরসিংদীর ছয় যুবক-তরুণ হত্যা, না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি কোনো আওয়াজ দেবেন? 
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com

মঙ্গলবার, ৩ এপ্রিল, ২০১২

বেহাল যুদ্ধাপরাধ বিচার

বেহাল যুদ্ধাপরাধ বিচার



॥ ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী ॥

বহু ঢাকঢোল পিটিয়ে সরকার যুদ্ধাপরাধের মামলা শুরু করেছিল। কিন্তু সে মামলা এখন খাবি খেতে শুরু করেছে। এর আগে ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ মতায় এসেছিল, তখন এসেছিল জামায়াতে ইসলামীর হাত ধরেই। তার আগে বিএনপি সরকারের আমলে তারা হাতে হাত মিলিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য দুর্বার আন্দোলন করেছিল একযোগে। তখন কোনো দিনই আওয়ামী লীগের এ কথা মনে পড়েনি যে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে প্রধানত জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।

কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সাথে জোট বাঁধা ও সরকার গঠনের পর থেকে তাদের মনোভাব বদলে যেতে শুরু করল। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হলো। প্রাথমিকভাবে জামায়াতে ইসলামীও বলল যে, সরকার যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারে, তাহলে তারাও স্বাগত জানাবে। কিন্তু মতলবি আওয়ামী আঙুল উঠে থাকল ওই জামায়াতে ইসলামীর দিকেই। এ যাত্রা তাদের দোষ সম্ভবত দাঁড়িয়েছিল এই যে, তারা কেন বিএনপির সাথে যোগ দিলো। এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়, ২০০১ সালেও যদি জামায়াত আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাতে থাকত, তাহলে যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে জামায়াতকে ফাঁসানোর কোনো চেষ্টাই করত না আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। 

যুদ্ধাপরাধ বিচারের ট্রাইব্যুনাল যখন গঠন করা হলো তখন এর নাম দেয়া হয়েছিল আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু বিধিমালা সম্পর্কে সারা পৃথিবীতে যখন সোচ্চারভাবে প্রশ্ন উত্থাপিত হতে থাকল তখন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বলতে শুরু করলেন, এটি কোনো আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল নয়। এটি অভ্যন্তরীণ (ডোমেস্টিক) ট্রাইব্যুনাল। ভাবখানা এমন যে, বিষয়টি আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। যেহেতু আন্তর্জাতিক নয়, আন্তর্জাতিক মহলে এই নিয়ে কথা বলার কোনো অধিকারই নেই। এভাবেই বিষয়টির একটি ইতি টানার চেষ্টা করেছে সরকার। তার পরও আন্তর্জাতিক মহল কখনোই চোখ বন্ধ করে থাকেনি। শুধু যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল নয়, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ আছে। সরকার হয়তো মনে করছে যে, এগুলো আমলে না নিয়ে দেশ পরিচালনা সহজ হবে। আর তাই এসব বিষয়ের প্রতি সরকার বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শন করে যাচ্ছে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ইতোমধ্যেই আমাদের মহামান্য বিচারকদের মন্তব্যাদি নিয়ে কঠোর সমালোচনা ও প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। সেগুলো বিচার বিভাগ সম্পর্কে সর্বজন শ্রদ্ধার যে আকাঙা, তারই প্রতিফলন মাত্র। আইনের ছাত্র নন এমন সাধারণ মানুষের মনে এখন বিচার বিভাগ নিয়ে নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। অর্থাৎ আমার ভাই যদি খুন হয়, তাহলে বিচার বিভাগের কাছে আমার স্বাভাবিক আকাঙা হবে, খুনি গ্রেফতার হবে এবং তার বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন আদালত। কিন্তু যদি কোনো আদালত ওই খুনের মামলা আমলেই নিতে না চান, তাহলে বিচার বিভাগ সম্পর্কে আমার অনাস্থার সৃষ্টি হতে বাধ্য। এসব অবস্থা রাষ্ট্রের ভেতরে অরাজকতার জন্ম দিতে পারে।

যুদ্ধাপরাধ বিচারের েত্ের সমপ্রতি আদালত যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলা যায়, সে সিদ্ধান্ত স্বাভাবিক বিচার-বুদ্ধি দিয়ে যৌক্তিক মনে হয় না। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলছে। এ আদালতে ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী রাখেন। যুদ্ধাপরাধ বিচার আইনে তা থাকার কথা। কিন্তু এ মামলার সাী হিসেবে কিছু দাগি চোর, নারী নির্যাতনকারী ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে আদালতে হাজির করতে পেরেছিল প্রসিকিউশন বা সরকার প। তারা সাী দিতে এসে বিবাদী পরে আইনজীবীদের জেরার মুখে এমন সব কথা বলে ফেলেছেন যে, এ মামলা সাজানোর েত্ের সরকারের মতলব অস্পষ্ট থাকেনি। তাদের কাউকে কাউকে আদালতে আনা হয়েছিল, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে। কিন্তু দেখা গেল, মুক্তিযোদ্ধা এরা নন। সে কথা আদালতে এরা আসামি পরে আইনজীবীদের জেরার মুখে অকপটে বলেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তাকে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দিয়েছেন। সেভাবে তিনি সনদ লাভ করেছেন এবং আওয়ামী লীগ নেতার কল্যাণে তিনি মুক্তিযোদ্ধার ভাতাদি গ্রহণ করে যাচ্ছেন। এই হলো মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে সাীর নমুনা। 

ফলে সরকার প বিপদে পড়ে গেছে। এখন এরা আর আদালতে সাীদের হাজির করতে নারাজ। সরকার পরে আইনজীবীরা যুক্তি দেখিয়েছেন যে, বাকি সব সাী অসুস্থ, সমপ্রতি তাদের কারো কারো স্মৃতিশক্তি বিলুপ্ত হয়েছে। কেউ কেউ মারা গেছেন। কেউ বা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে গেছেন। ফলে তাদের আদালতে হাজির করা সম্ভব হচ্ছে না। যাদের সম্পর্কে সরকার প এ রকম বক্তব্য দিয়েছেন, দৈনিক নয়া দিগন্ত তাদের কারো কারো সাথে কথা বলে যে চিত্র তুলে ধরেছে, তা উদ্বেগজনক। এসব সাীর কেউ কেউ নিজ গৃহেই আছেন। কেউ কেউ জমিজমা চাষ করেন। কেউ কেউ আছেন নিজ বাড়িতেই। কেউ কেউ বলেছেন, আদালতে গিয়ে এরা সরকার পরে শেখানো মিথ্যা কথা বলতে পারবেন না। একজন পেশায় উকিল, তিনি নিয়মিত তার নিজ এলাকায় বরাবরের মতো ওকালতি করতে প্রতিদিন আদালতে হাজির হচ্ছেন। এ রিপোর্টের কোনো কিছুই সরকার প বা সংশিস্নষ্ট সাীরা অস্বীকার করেননি। 

সরকার প দাবি করছিল, এরা পুলিশের কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছেন বলে যে রেকর্ড রয়েছে সেটাকে তাদের সা্য হিসেবে গ্রহণ করা হোক। কিন্তু আদালত তো একটা বিচারিক প্রতিষ্ঠান। সেখানে সাী হাজির হবেন। তারা পুলিশের কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছেন আসামিপরে আইনজীবীরা জেরার মাধ্যমে সেটা যাচাই করবেন। তার মধ্য দিয়েই সত্য উদ্ঘাটিত হয়ে আসবে। কিন্তু মহামান্য যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরকার পরে আইনজীবীদের দাবি অনুযায়ী গড়হাজির সাীদের জবানবন্দীকেই সা্য হিসেবে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আইনি বিবেচনা ভিন্ন। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছে দেয়া জবানবন্দীকে তো সাীর অনুপস্থিতিতে সা্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারি না। পুলিশ তাদের জোর করে কিছু বলিয়েছে কি না, টাকা-পয়সার সুবিধা দিয়ে কিংবা ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে কোনো বক্তব্য আদায় করেছে কি না, সেটা স্পষ্ট নয়। পুলিশের এসব তদন্তের ওপর জনগণের কোনো আস্থা নেই। সাধারণ মানুষ আদালতের ওপর আস্থা রাখতে চায়। সুতরাং সাী আদালতে আসবেন। তাকে এভাবে জেরা করা হবে। জেরার মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটিত হবে। এটা স্বাভাবিক বিবেচনাবোধ। 

কিন্তু আদালত পুলিশের রিপোর্টকেই সা্য হিসেবে মেনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাংলাদেশের আইনজীবী মহল এতে ভয়াবহ উদ্বিগ্ন। সাধারণ মানুষও, যারা বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী নন, তারাও একে ন্যায়বিচারপরিপন্থী বলে মনে করছেন। ধরা যাক, পুলিশ আমাকে ধরল, ধরে এমন নির্যাতন চালাল যে, তোমাকে আইনমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই কথা বলতেই হবে। নির্যাতনের একপর্যায়ে আমি পুলিশের শেখানো কথা বলতে বাধ্য হলাম। কিন্তু আদালত এমন জায়গা, সেখানে আমি স্বাধীন মানুষ। আদালতে দাঁড়িয়ে পুলিশের নির্যাতনের কথা বলব। আমার ওপর জোরজবরদস্তির কথা বলব। পুলিশের কাছে যা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলাম তা অস্বীকার করে আসল সত্য প্রকাশ করব। আদালত সত্য আমলে নেবেন এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। 

আমি আইনের ছাত্র নই। কিন্তু সম্ভবত বুদ্ধি-প্রতিবন্ধীও নই। সে কারণে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে যে, অনুপস্থিত সাীর জবানবন্দীকে কিভাবে আদালত প্রকৃত ঘটনা হিসেবে বিবেচনায় নিলেন। কেন অনুপস্থিত সাীর জবানবন্দী বাতিল বলে ঘোষিত হলো না। আইনের অন্ধিসন্ধি তো আমি জানি না। ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পার না হলে জরিমানার ব্যবস্থা আছে। প্রকাশ্য স্থানে ধূমপান করলে জরিমানার ব্যবস্থা আছে। আমি ফার্মগেট এলাকায় এই দুটো কাজই করি। ফার্মগেটের পুলিশবঙের কাছাকাছি বাস থেকে নেমে রাস্তা পার হওয়ার জন্য অপো করি। পুলিশ নির্দেশ না দিলে আমরা ডজন ডজন লোক রাসৱা পার হয়ে ওপারে চলে যাই। আমার কর্মস্থল কলোনি বাজারে। সারা দিন যদি সিগারেট নাও খাই কলোনি বাজারে যাওয়ার পথে ফার্মগেটের ওই মোড় থেকেই একটি সিগারেট কিনে ধরাই। কোনো পুলিশ আমার কাছে জরিমানা চায়নি। আমি কোনো চিন্তাও করি না। 

কিন্তু এই পুলিশের তথাকথিত জবানবন্দী সা্য হিসেবে আদালতে গ্রহণ করা হবে? হতে পারে পুলিশ কোনো সাীর কাছে যায়ইনি। সরকারের নির্দেশে নিজেরাই মনগড়া রিপোর্ট লিখে দিয়েছে। আর আদালত সেটাকেই সা্য হিসেবে গ্রহণ করবেন। তাহলে ওই আদালত সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কী ধারণা হবে? আইনজীবীরা বলছেন, সাীকে আইন অনুযায়ী আদালতে শপথ নিয়ে সা্য দিতে হয়। কিন্তু শপথ না নিয়ে পুলিশের কাছে কিছু বললে তা সা্য হয় না। এভিডেন্স গ্রহণ করে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়; কিন্তু সা্য হিসেবে তা গ্রহণ করার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ সাীকে আদালত শুনবেন। অভিযুক্ত প তাকে জেরা করবেন। ডিফেন্স লইয়ার ক্রসচেক করবেন। তারপর তা সা্য হতে পারে। কিন্তু পুলিশের দেয়া এভিডেন্সকে সা্য হিসেবে গ্রহণ করার কোনো সুযোগ নেই। এটা যদি গ্রহণ করা হয় এবং এর ভিত্তিতে যদি বিচার করা হয়, তাহলে সেখানে ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ থাকে না। বিচারের সাথে সংশিস্নষ্ট বিচারক-আইনজীবীসহ সবাই সে কথা ভালোভাবেই জানেন। 
যুদ্ধাপরাধ প্রহসনে এখন গ্রেফতার আছেন বিএনপির সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। তিনি চিরাচরিত রসবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। সরকারের এত নির্যাতনের মুখেও হাস্যরস সৃষ্টি করতে পারেন। তার স্ত্রী মহীয়সী ফারহাত কাদের বিচার প্রক্রিয়ায় একেবারেই অতিষ্ঠ হয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন, বিচারের নামে প্রহসন করা হচ্ছে। এসব না করে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে পল্টন ময়দানে প্রকাশ্যে ফাঁসি দিলেই হয়। এতে করে দেশে টাকারও অপচয় বন্ধ হবে। সেই সাথে সরকারের সিদ্ধান্ত বাসৱবায়ন হবে, ‘তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে দেয়া বিভিন্ন সাীর জবানবন্দীকে সা্য হিসেবে গ্রহণ’ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার প্রতিবাদে ুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে গত শুক্রবার তিনি এ কথা বলেন। 

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সম্মানিত বিচারকের প্রতি আবেদন, এই ট্রাইব্যুনাল গঠনের খাতায় কী আছে সেটা এ দেশের সাধারণ মানুষ কখনোই বিবেচনায় নেবেন না। তাদের কাছে যা কিছু ন্যায়বিচার মনে হয় সেটাকেই তারা বিবেচনায় নেবেন। ট্রাইব্যুনাল কি জন-আকাঙার ঊর্ধ্বের কিছু হয়ে থাকবেন? 
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com