শনিবার, ৯ জুন, ২০১২

সংসদ-আদালত যখন মুখোমুখি

সংসদ-আদালত যখন মুখোমুখি



॥ ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী ॥

আমরা সাধারণ নাগরিকেরা আদালত কিংবা সংসদ উভয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা বিবেচনা করে থাকি যে, আদালতই আমাদের শেষ আশ্রয়। সরকার কিংবা প্রশাসন, চোর-ডাকাত-খুনি যার মাধ্যমে আমরা বিপদগ্রস্ত হই না কেন আদালতই আমাদের শেষ ভরসাস্থল। কিন্তু সর্বত্র দলীয়করণের ফলে এখন আমরা ক্রমেই যেন ভরসা হারিয়ে ফেলছি। জাতীয় সংসদে সরকারদলীয় সদস্যরা যে ভাষায় যা বলেন, তাতে মাথা হেঁট হয়ে যায়। তারা জনগণের প্রতিনিধি। কিন্তু জনগণ বোধ করি ভাবতেও পারেনি যে, জাতীয় সংসদে গিয়ে তারা এতটা অশালীন ও রূঢ় হবেন। কখনো কখনো জানা সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য তারা হেন ভাষা নেই যা প্রয়োগ করেন না। সেগুলো অশ্রাব্য ও কুরুচিপূর্ণ। এতে অতিষ্ঠ হয়ে স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন যে, আপনাদের ভাষা শুনে মনে হয় আপনারা কোথা থেকে এসেছেন। 
পৃথিবীর সব দেশেই জাতীয় সংসদে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। হাতাহাতি যে হয় না, তেমনও নয়। কিন্তু অধিকাংশ সংসদে অন্যকে আক্রমণের ভাষা হয় ইঙ্গিতবহ ও হাস্যরসাত্মক। কখনো সেসব ভাষা শুনে সে দেশের মানুষ সশব্দে হাসেন, কখনো বা মুখ টিপে। কিন্তু এখন বাংলাদেশে যারা সংসদ সদস্য হয়ে এসেছেন, তাদের অনেকেই সে জ্ঞানবুদ্ধি রাখেন বলে মনে হয় না। তা ছাড়া এরা কিছুতেই মনে রাখতে চান না যে, ঢিলটি মারলে পাটকেলটি খাওয়ার আশঙ্কা থাকে। 
তা সত্ত্বেও এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, জাতীয় সংসদই গোটা দেশের জনগণের ভালো-মন্দের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আর আইনও তারাই প্রণয়ন করেন। প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করেন। এখানে তারা বিচারকদের মতা নির্ধারণ করে দেন। বিচারকেরাও সংবিধান নির্ধারিত আইনের বাইরে অন্য কোনো মতা প্রয়োগের অধিকার রাখেন না। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর আগে অন্য বিচারক নিয়োগের েেত্র প্রধান বিচারপতির পরামর্শ গ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী যখন পাস করা হয়, তখন প্রধান বিচারপতির সে মর্যাদা ও মতা কেড়ে নেয়া হয়। ওই সংশোধনীবলে রাষ্ট্রপতি নিজেই প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে সব বিচারপতি নিয়োগের মতা নিজ হাতে নিয়ে নেন। ওই সংশোধনী প্রস্তাব জাতীয় সংসদই পাস করেছিল। ফলে বিচার বিভাগের উচ্চবাচ্য করার কোনো মতা ছিল না। তারা অবনত মস্তকে সেটা মেনে নিয়েছিলেন। 
বিচার বিভাগকে সংবিধান যে মতা দিয়েছে সেখানে আদালত নিঃসন্দেহে সার্বভৌম। আবার সংবিধান প্রণয়ন, তার সংশোধন, বিচার বিভাগের মতা নির্ধারণ সেসবই সংসদেরই দায়িত্ব। সেখানে সংসদই সার্বভৌম। উভয় প্রতিষ্ঠানকে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি। কিন্তু সম্প্রতি আমরা এর বড় ধরনের ব্যত্যয় ল করছি। 
আদালতের কোনো কোনো রায় আমাদের মতো আইন-অনভিজ্ঞ মানুষের বোধের অগম্যই থেকে যাচ্ছে। যেমন মুন সিনেমা হলের মালিকানা দাবি করেছিলেন এর প্রকৃত মালিক। আদালত সেটি মঞ্জুর করে সিনেমা হলটি তার মালিককে ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক এই নির্দেশ দিতে গিয়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দেন। আমাদের মতো সাধারণ মানুষেরা বুঝতে পারিনি যে, মুন সিনেমা হলের মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ার সাথে পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের সম্পর্ক কী। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীকে বিচারপতি খায়রুল হক সংবিধানের মূল চেতনার পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছিলেন। সঙ্গত কারণে প্রশ্ন উঠল, যে গণতান্ত্রিক চেতনা ধারণ করে সংবিধান প্রণীত হয়েছিল। সংবিধানের চতুর্র্থ সংশোধনী তথা একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠায় যে ব্যবস্থা করা হয়েছিল সেটিও তো সংবিধানের মূল চেতনার একেবারে বিপরীত ছিল। খায়রুল হক যদি তখন চতুর্থ সংশোধনী বাতিল করতেন, তাহলে বোঝা যেত যে, তিনি ন্যায়বিচার করলেন। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকালের শেষাশেষি জারি করা চতুর্থ সংশোধনী বহাল রাখায় এবং প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনকালে জারি করা পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করা সিদ্ধান্তটিকে জনগণের কাছে রাজনৈতিক একদেশদর্শী মনে হয়েছে। আর আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই যে, ওই রায়ের পর প্রায় দু’বছর অতিবাহিত হলেও মুন সিনেমা হলের মালিককে এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি কিংবা তিনি হলটি ফেরত নিতেও আসেননি।
অথচ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রথা আবার প্রবর্তিত হয়েছিল এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আবার ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল। বিচারপতি খায়রুল হক পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের রায় দিলেও সেখানে যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার বিধান ছিল, সেগুলোকে বহাল রাখেন। এতে খুব সঙ্গতভাবেই আদালতের রায় নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 
অপর দিকে বিচারপতি খায়রুল হকই আর এক রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সংবিধানপরিপন্থী ঘোষণা করে তা বাতিল করে দিয়েছেন। কিন্তু এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে এ দেশে পরপর তিনটি সফল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যাতে সব রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে এবং দেশে-বিদেশে সে তিনটি নির্বাচন সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়েছে বলে অভিহিত করা হয়। সেটি বাতিল করে দেশে এক চরম রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ডেকে আনা হয়েছে। আদালত তো অনেক কিছুই বিবেচনায় নেন। এমনকি বিচার ও দণ্ড দেয়ার েেত্রও তারা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন। সেভাবে কারাগারে রাখার েেত্রও কাউকে ডিভিশন দেয়া হয়। কাউকে কাউকে তা দেয়া হয় না। অর্থাৎ দেশ-কাল-ব্যক্তি কোনোটাই আদালতের দৃষ্টির বাইরে নয়।
সাম্প্রতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে সড়ক ভবন দ্রুত সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে হাইকোর্টের নির্দেশকে কেন্দ্র করে। হাইকোর্ট সড়ক ভবন ৫ জুনের মধ্যে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু গত ২৯ মে মঙ্গলবার মাগরিবের পর জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, ৫২ বছরের অবস্থান থেকে এটা রাতারাতি সরিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। তিনি প্রশ্ন করেন, সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা থাকুক, আদালত কি তা চাইছেন না? এ ব্যাপারে আদালতকে সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানান শাহরিয়ার আলম। এরপর পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে মহাজোটের (জাসদ) সংসদ সদস্য মইনুদ্দিন খান বাদলও আদালতের বিভিন্ন বিষয়ের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, প্রত্যেককেই একটি মাত্রায় আসতে হবে। আইনকে অনেক েেত্রই অন্ধভাবে উপস্থাপন করা হয়। আইনটির প্রকৃত ব্যাখ্যা প্রয়োজন। 
এ বিষয়ে স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, আদালতের রায়ে জনগণ ুব্ধ হলে বিচার বিভাগকেও তারা রুখে দিতে পারে। সরকার স্বৈরাচারী হলে জনগণ রুখে দাঁড়াতে পারে তাদের বিরুদ্ধেও। তাই কারোরই এমন ভাবসাব হওয়া ঠিক নয় যে, আমি মতা পেলাম, একটা কিছু দেখাই। জনগণের রুখে দাঁড়ানোর ইতিহাস আছে। আমি কি হনুরে ভাবসাব ঠিক নয়। কোনো ভাব না দেখিয়ে সবারই উচিত দায়িত্ব পালনের মনোভাব রাখা। তিনি বলেন, আদালত নিরপে ও স্বাধীন। কিন্তু দেশের মানুষের বিচারের েেত্র বছরের পর বছর লেগে যাবে, আর নিজেদের বিষয় হলে বিচার বিভাগ ঝটপট সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবেন এটা ভালো দেখায় না। কেবল নিজেদের বিষয়টি দেখলে সরকার কিভাবে চলবে? সরকারকেও সহযোগিতা করতে হবে। স্পিকার বলেন, আমি যদি মনে করি সংসদই সর্বোচ্চ মতার অধিকারী, সরকার যদি মনে করে তারাই সর্বোচ্চ মতার অধিকারী, আর আদালত যদি মনে করেন যা ইচ্ছা তা করবেন এটা ঠিক নয়। 
হাইকোর্টের বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক ও বিচারপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেটের বক্তব্যকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল ও আদালত অবমাননাকর বলে মন্তব্য করেছেন। একই সাথে সংবিধান ও বিচার বিভাগ সম্পর্কে স্পিকারের ন্যূনতম জ্ঞান নেই বলে আদালত মন্তব্য করেছেন, সংসদের অভিভাবক হলেন স্পিকার। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুসারে তিনি রাষ্ট্রের তিন নম্বর ব্যক্তি। অথচ তার সংবিধান, সংসদ ও আদালত সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান নেই। তাই ওই পদে থাকার যোগ্যতাও তার নেই। 
আদালত বলেছেন, সংবিধান অনুসারে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আদালত বলেন, আমি কি হনুরেÑ এটা কোনো সংসদীয় ভাষা হতে পারে না। স্পিকার একজন আইনজীবী। তিনি কি জানেন না, বিচারাধীন বিষয়ে উচ্চ আদালতের সমালোচনা করা যায় না। কোর্টের রায়ে জনগণ যদি ুব্ধ হয়, তাহলে বিচারকের বিরুদ্ধে একসময় রুখে দাঁড়াতে পারেÑ স্পিকারের এ মন্তব্যের সমালোচনা করে আদালত বলেন, এটা পুরোপুরি আদালত অবমাননাকর। জনগণকে তিনি উস্কে দিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল অপরাধ করেছেন। স্পিকার বিচারাধীন বিষয়ে কোনোভাবেই সংসদ সদস্যদের উস্কে দিতে পারেন না। আইনজীবী হিসেবে স্পিকারের বার কাউন্সিলের সনদ থাকা উচিত কি না তা নিয়েও এখন ভাবতে হবে। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বা সরকারের কোনো সংস্থা বিচার বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে বলার কে? একটি বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে আদালত বলেন, স্পিকার কোনো দিন এই বই পড়েছেন কি না সন্দেহ আছে। এই বই দূরে থাক, এখন মনে হচ্ছে সংবিধান ও আদালত সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান স্পিকারের আছে কিনা? স্পিকারের বক্তব্য শুধু অজ্ঞতাই নয়, তার বক্তব্য অমার্জনীয়। আমরা তার বক্তব্যে হতবাক হয়েছি। দায়মুক্তির অপব্যবহার তিনি করতে পারেন না। এ সময় সাবেক আইনমন্ত্রী আদালতে বলেন, স্পিকার সংসদের প্রতীক। আদালত বলেন, ওই প্রতীক হতে হলে যোগ্যতা থাকতে হয়। লেখাপড়া থাকতে হয়। তিনি বিচারাধীন বিষয়ে আলোচনায় শরিক হয়েছেন। এ সময় সিনিয়র আইনজীবীরা হাতজোড় করে আদালতকে অনুরোধ জানান যে, বিচার বিভাগ ও সংসদকে যেন মুখোমুখি দাঁড় করানো না হয়। 
বিচারপতি জনাব মানিকের এ রকম বক্তব্যের পর সংসদে বিষয়টি নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা হয়। সিনিয়র সংসদ সদস্যরা আগামী তিন দিনের মধ্যেই বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের অপসারণের আলটিমেটাম দিয়েছেন। তারা বলেন, তা না হলে সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতিদের অভিশংসনের মতা আবার সংসদে ফিরিয়ে আনা হবে। তারা বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন হতে পারে। কিন্তু তারা সংবিধান ও সংসদের ঊর্ধ্বে নয়। তারা ওই দুই বিচারপতিকে নিঃশর্ত মা প্রার্থনা করতে বলেন। 
গত ৫ জুন বিকেলে সংসদ অধিবেশন বসার পর থেকেই সংসদ যেন ফুঁসছিল। এতে বক্তব্য রাখেন তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মইনুদ্দিন খান বাদল ও মুজিবুল হক চুন্নু। তোফায়েল আহমেদ বলেন, একজন স্যাডিস্ট বিচারককে মেনে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই বিচারক মানুষকে কষ্ট দিয়ে মজা পান। সালাম না দেয়ায় পুলিশকে রাস্তায় কান ধরে ওঠবস করানো ছাড়াও তিনি বিমানের তৃতীয় শ্রেণীর টিকিট কিনে কিভাবে সামনের সারিতে আসন চান, সেটি আমরা দেখেছি। তিনি হয়তো কোনো একদিন সংসদ সদস্যদেরও একইভাবে দাঁড় করিয়ে রাখতে চাইবেন। বিচারপতিদের বুঝতে হবে, বিচারপতিদের বিচার করবে যারা আজ জেগেছে সেই জনতা। তিনি বলেন, অবাক হয়ে গেলাম কিভাবে একজন বিচারক সংবিধান লঙ্ঘন করেন? তাহলে কি বিচার বিভাগ সংসদের ঊর্ধ্বে উঠে গেল? আর এর আগের বার এই বিচারপতিকে আওয়ামী লীগ চাকরি দিয়েছিল। কিন্তু জোট সরকার তার চাকরি স্থায়ী করেনি। এবার আওয়ামী লীগ এসে তার চাকরি কনফার্ম করেছে। আর তিনিই কি না একজন মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে এ রকম কথা বলেন!
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বিচারপতিরা সংবিধানের ওপর সার্বভৌম হতে পারে না। তারা সংসদের ঊর্ধ্বে নন। এ ধরনের আদেশকে আমরা সংসদের ওপর বিচার বিভাগের নগ্ন হস্তপে মনে করি। বিচার বিভাগের হাত লম্বা। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তাদের হাত সংসদের চেয়েও লম্বা। স্পিকারকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলা মানে সংসদ, সাড়ে তিন শ’ সংসদ সদস্য, সরকারÑ সবাইকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল করা। সংসদের ওপর বিচার বিভাগের হাত নেই। স্পিকারকে অপমান করার মতা বিচার বিভাগের নেই। এই বিচার বিভাগের মা চাওয়া উচিত। সংসদের ওপর হস্তপেকারী ওই বিচারককে বিচার বিভাগ থেকে প্রত্যাহার করে সংসদের সার্বভৌমত্ব রা করতে চাই। মহাজোটের এমপি রাশেদ খান মেনন বলেন, বিচারপতি স্পিকারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ করে জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্ব ও অধিকারের ওপর হস্তপে করেছেন। সংবিধান-সংসদকে অবহেলা করেছেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এই বিচারপতিকে অভিশংসন করার জন্য প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেছেন। জোটভুক্ত জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্ন বলেন, সামান্য কারণে ওই বিচারপতি ঘণ্টার পর ঘণ্টা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। সব কিছু দেখে মনে হয়েছে তিনি মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত। তার অভিশংসন হওয়া প্রয়োজন। 
এ দিকে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ করেছেন, এই বিচারপতি তাকে আদালতে প্রকাশ্যে বানর বলেছেন এবং পাঁচ শতাধিক আইনজীবীকে অপমানজনক ভাষায় কথা বলেছেন। ফলে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে শামসুদ্দিন আহমদ চৌধুরী মানিককে অপসারণের জন্য লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছেন। এই আবেদনের কপি তিনি প্রধান বিচারপতিকেও দিয়েছেন। 
আমরা এত সব উদ্ধৃতি দিলাম এই কারণে যে, প্রশাসন কিংবা বিচার বিভাগ দলীয়করণের ফল কী হয় সরকার সম্ভবত বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবে এবং আশা করি বিএনপি কেন তার নিয়োগ স্থায়ী করেনি তার যৌক্তিকতাও সরকার উপলব্ধি করবে। সংসদে বিএনপি বা বিরোধী দল বলে কিছু ছিল না। ছিলেন সরকারদলীয় ও মহাজোটের সদস্যরা। এই বিচারপতি সম্পর্কে তারাই এত সব মন্তব্য করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কি বোধোদয় হবে? 
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন